ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে এ সরকার : মাওলানা ইসহাক

KM-Roundtable1খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, জুলুম নির্যাতন কওে কেউ বেশী দিন টিকে থাকতে পারে না। মনে রাখতে হবে সবচেয়ে মহাপরিকল্পনাকারী হচ্ছে আল্লাহ। আল্লাহ সবসময় মজলুমের পক্ষে। ইনশাআল্লাহ আবার আন্দোলন হবে। এ সরকারের পতন হবে। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে এ সরকার। খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে ‘ চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির  বক্তব্যে এ কথা বলেন ।

এতে  প্রধান অতিথির বক্তব্যে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, সমস্যা সমাধানের জন্যে রাজনীতি, নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করার জন্যে রাজনীতি নয়। ৪৩ বছরের ইতিহাসে এদেশে বর্তমান সংকটের মত সংকট সৃষ্টি হয়নি। এ সংকট বেশী দিন চলতে থাকলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হতে বাধ্য। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে সেই সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অজানা কারণে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে যে সংকটের সৃষ্টি করেছেন তাতে দেশ ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিনত হলে এর জন্যে দায়ী হবে বর্তমান সরকার।

তিনি বলেন, সংসদ না ভেঙ্গে নতুন সংসদ নির্বাচন পৃথিবীর কোথায়ও হয়না, হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া বর্তান সংসদেও ১৫৩ জন সাংসদেও বৈধতা যখন প্রশ্নবিদ্ধ, তখন বর্তমান সরকারের বৈধতা কোথায়? গংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘ জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হবেন।’
তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের কারণ, সরকারের অন্যায়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। জনগণের সম্পৃক্তায় গণআন্দোলন গড়তে হবে। কারণ জনগণের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে কেই সফল হতে পারে না।

আজ মঙ্গলবার বিকাল ২:৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাঊঞ্জে খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্ব করবেন অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। আলোচনায় অংশগ্রহন করেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, নায়েবে আমীর মাওলনা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী, এলডিপি’র মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমাদ, পবিপ্রবি’র সাবেক উপাচর্য ড. আবদুল লতিফ মাসুম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাওলানা সোয়াইব আহমদ, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট আবদুল মোবিন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমদ মনি, খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল হাফিজ খসরু, মাওলানা রশীদ আহমদ ফেরদৌস, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মাওলানা নোমান মাযহারী প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন ও শেখ গোলাম আসগর।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, জুলুম নির্যাতন কওে কেউ বেশী দিন টিকে থাকতে পারে না। মনে রাখতে হবে সবচেয়ে মহাপরিকল্পনাকারী হচ্ছে আল্লাহ। আল্লাহ সবসময় মজলুমের পক্ষে। ইনশাআল্লাহ আবার আন্দোলন হবে। এ সরকারের পতন হবে। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে এ সরকার।

উপস্থাপিত প্রবন্ধে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ছিল নির্বাচনের নামে একটি তামাশামাত্র। এ নির্বাচনে সরকার বিজয়ী দাবী করলেও প্রকৃতপক্ষে তাদেও নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। সরকার নির্বাচনকে কলংকিত করেছে। এখন চলমান সংকট নিরসনে সবদলের অংশগ্রহনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বচানের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার বাগারম্বর পরিহার করে দ্রুত ১৯ দলের সাথে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সংলাপ শুরু করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করতে হবে। দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারকে সুবিবেচকের পরিচয় দিতে হবে।
নিবন্ধে তিনি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে বিরোধী দলসমূহকে তৃণমূল পর্যায়ে “সংগ্রাম পরিষদ” গড়ে তুলতে হবে। রাজধানীতে সংগঠন ও আন্দোলনকে মজবুত করার জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ধর্মীয় চিন্তা চেতনার আলোকে এদেশের জনগণের রাজনিিত করার অধিকার আছে। পার্শবর্তী দেশেও ধর্মভিত্তিক দল রাজণীতি করছে। আর এ দেশের অধিকাংশ জনগন ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, আজকে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়া যেভাবে দখলদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরকেও পার্শবর্তী দেশের যেকোন আক্রমনের মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। সিকিমের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়ার জন্যে দায়ী লেন্দুক দর্জীর ইতিহাস স্মরণ রাখতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেন, আমাদের দেশে একবার কেউ ক্ষমতায় গেলে আর ছাড়তে চায় না। কারণ ক্ষমতা ছাড়া কঠিন। ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ফিরে আসতে চাইলে লাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়। হয় জিন্দা লাশ, নয়তো মৃত লাশ। কিন্তু মনে রাখতে হবে ক্ষমতাশালী মীর জাফর, ঘষেটি বেগমদের আজ সবাই ঘৃণা করে। কারণ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ শক্তি প্রযোগ করলে, জোর জুলুম করলে তাদের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মত অবস্থা হয়।

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলনা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে।
এলডিপি’র মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমাদ বলেন ১৯-দলীয় জোটের কোন দল জঙ্গীবাদে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্র, গণ-আন্দোলনে বিশ্বাসী। বর্তমান সরকার যেভাবে কথায় কথায় গুলি করে তার বিরুদ্ধে জনগণ ’লাল পতার বিরুদ্ধে লাল পতাকা’ নীতি গ্রহন করলে সরকার টিকতে পারবে না।
পবিপ্রবি’র সাবেক উপাচর্য ড. আবদুল লতিফ মাসুম বালন, যেকোন স্বৈাচারীর পতনের প্রকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে ’মাস মুভমেন্ট’ বা তীব্র গণআন্দোলন। সে জন্যে জনগনকে শামিল করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই অগণতান্ত্রিক তথা স্বৈরাচারী সরকারের পতন সম্ভব।